৭ম সংখ্যা, জুলাই ২০১৪
কৌশলী গৌতমের শূন্য অঙ্ক’র ভয়াবহ শূন্যতা
কিছু কথা বাস্তব কিংবা কল্পনার জগতকে ক্যামেরার মাধ্যমে দৃশ্যমান করে তোলাই চলচ্চিত্র নামের শিল্পমাধ্যমটির প্রধান কাজ। যেখানে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে বহমান সমাজের নানাধরনের সাংস্কৃতিক উপাদান। তাই যে সাংস্কৃতিক আবহের ভিতর দিয়ে এটা নির্মাণ করা হয়, তারই ছোঁয়া
চরাচর : নিম্নবর্গের স্বাধীনতাহীনতা বনাম স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষা
গান চোখ বুজে শুনবে, হাঁ করে তাকিয়ে নয়। তখন বুঝতে পারতাম না, মা কেনো এমন কথা বলছেন। পরে মা রবীন্দ্রনাথ পড়তেন, পাশে বসে আমি চোখ বুজে শুনতাম। শুনতে শুনতে একটা সময় লক্ষ করলাম মাথার মধ্যে একধরনের দৃশ্যকল্প খেলা করছে। একসময় সেই দৃশ্যকল্পও মনের পরিস্থিতি বুঝে ভিন্ন ভিন্ন
সৃষ্টির শুরুতে পুরুষ ও নারীর এখনকার মতো আলাদা সত্তা ছিলো না। বরং নারী ও পুরুষ মিলে ছিলো একক সত্তা। তাদের দেহ ও ঘাড় একটি হলেও মুখমণ্ডল ছিলো দুটি। ফলে বিভিন্ন দিকে তারা দেখতে পেতো সহজেই। অবয়ব দেখে মনে হতো যেনো দুটি প্রাণীকে আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে; যাদের চারটি
রাশোমন-এ মনুষ্যত্ব : আকুতাগাওয়া’র সঙ্কট কুরোসাওয়া’য় উত্তরণ
১৯৫১ সালে যখন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব থেকে রাশোমনকে মনোনীত করা হয়, তখন খোদ জাপানের কেউই ভাবেনি চলচ্চিত্রটি নিরঙ্কুশ জয়ে প্রথম স্থান অধিকার করবে। রাশোমন-এর এই জয় ছিলো বিস্ময়কর, এই বিজয় ছিলো পশ্চিমাদের এশিয় চলচ্চিত্রকে নতুনভাবে আবিষ্কারের বার্তাবহ। রাশোমন আরো
‘হরির উপরে হরি, হরিতে শোভা পায় হরিকে দেখিয়া হরি, হরিতে লুকায়’
এ বড়ো আজব কারখানা হিটলারের দেশ জার্মানি বেড়াতে গিয়ে আমেরিকান রুথ হ্যান্ডলার নিয়ে এসেছিলেন পূর্ণবয়স্ক এক নারী শরীরের পুতুল—‘বিল্ড লিলি’। লিলি নামের কার্টুন চরিত্রের এই পুতুল নাকি যুদ্ধোত্তর ইউরোপের পরিবর্তিত সমাজে, যৌনবাদী পুরুষের জগতে নারীত্ব ও যৌনতার প্রতীক
অপ্রত্যাশিত সৌন্দর্যের ছবি কামার আহমাদ সাইমনের `শুনতে কি পাও!'
আমাদের এই দুনিয়াটার ধরণই এমন—বিচিত্র, অজস্র, অসীম সবকিছু ছড়িয়ে আছে এর সবখানে। আর এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই চিরকাল এক রকম থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই নানা পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন, বিভাজন ইত্যাদি চলে যুগের পর যুগ। এই হয়তো সর্বকালের, সর্বস্থানের
‘একটা ভালো চলচ্চিত্র কখনোই দীর্ঘ হতে পারে না। আবার একটা বিরক্তিকর চলচ্চিত্র কখনোই সহজে শেষ হতে চায় না।’—কথাটি একজন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালকের। এবং দর্শকমাত্রই জীবনে একবার হলেও এ সত্য উপলব্ধি করেছেন। কথাটি কিন্তু পাঠকের বেলায়ও খাটে। বই হাতে নিয়ে যদি আগ্রহ
মনের সঙ্গে বাস্তবের সাযুজ্য রূপায়ণে ভিনের অভিব্যক্তি
পুরো নাম : রবার্ট ভিনে জন্ম : ২৭ এপ্রিল ১৮৭৩, সাইলিজা, জার্মানি চলচ্চিত্রে অবদান : অভিব্যক্তিবাদ ধারার পথিকৃৎ মৃত্যু : ১৯৩৮ সালের ১৭ জুলাই, প্যারিস চলচ্চিত্রে অভিব্যক্তি, অভিব্যক্তির চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র নিজ গুণেই বাস্তবতাকে তার মধ্যে ধারণ করে—এটা
গত সংখ্যায় (সংখ্যা ৬) ‘ম্যাজিক আড্ডা’ বিভাগে আমরা প্রয়াত নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ স্মরণে পশ্চিমবঙ্গের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত আড্ডার ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করেছিলাম। আমরা মূলত সেই আড্ডার অডিও-ভিজ্যুয়াল আলোচনার একটি লিখিত রূপ দিয়ে পাঠককে ভিন্ন স্বাদ
ভারতীয় দর্শকরা এই ধরনের চলচ্চিত্র দেখতে অভ্যস্ত এবং এতেই তারা সবচেয়ে বেশি স্বস্তি বোধ করে। মনস্তত্ত্ববিদ সুধীর কাকার বলেন, ‘হিন্দি চলচ্চিত্র সমন্বিত অলীক কল্পনাকে উপস্থাপন করে। এটা দিবাস্বপ্ন দেখায়, অবচেতন মনের নানা বিষয় ও সমাজের একটা বড়ো অংশের মানুষের লুক্কায়িত
নির্মাতার মধ্যবিত্তের টান, বাড়ে হলছাড়া মানুষের ভিড়
শেষটা হয় প্রেক্ষাগৃহে যৌগিক শিল্পমাধ্যম চলচ্চিত্রকে যদি ভাগ করা হয়, তবে এর এক ভাগে নির্মাণ পড়লে অন্য অংশে পড়বে প্রদর্শন। পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলী সবাই মিলে এতো এতো শ্রম দিয়ে যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তার শেষ ঠেকে প্রেক্ষাগৃহে গিয়েই। এই প্রেক্ষাগৃহেই রচিত
অগ্নি : কোটি টাকার অস্পষ্ট জ্যামিতি
টাইপরাইটারের ইংরেজি বর্ণমালার কি-বোর্ড নকশা ১৮৭৪ সালেই বাণিজ্যিকভাবে শেষ হয়েছিলো। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তৈরি হয়েছিলো এর বাংলা কি-বোর্ড নকশা; ১৯৬৫ সালে জনাব মুনীর চৌধুরী প্রথম বৈজ্ঞানিক বাংলা কি-বোর্ডের নকশা করেছিলেন। আমাদের ছেলেবেলাটা কেটেছে অপটিমা মুনীর
নারী-ভানুর গান্ধী জয়, শিল্পে জয়ী নারীর ‘পরাজয়’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়ো ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় আই সি এস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) কর্মকর্তা। সত্যেন্দ্রনাথ যখন বিয়ে করেন তার স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনীর বয়স ছিলো মাত্র সাত বছর। এই জ্ঞানদানন্দিনীই নাকি পরে জোড়াসাঁকোর পুরো ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের
অতএব, তোমরা ভানুর কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে
‘যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এক সৈনিক পালিয়ে চলে আসলো। সবাই বলতে লাগল—শেষ পর্যন্ত তুমি তাহলে ভয়ে কাপুরুষের মতো পালিয়ে চলে এলে? সৈনিকের উত্তর : ঠিক তা নয়। আমার যুক্তি শুনলেই তোমরা তা বুঝতে পারবে—দেয়ার আর টু পসিবিলিটি ইন ফ্রন্ট। যুদ্ধে আমি শত্রুকে মারবো, নয়তো শত্রু আমাকে
যে সময়টার কথা বলা হচ্ছে তখন বি টি ভি মানে বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া অন্য কোনো বাংলা চ্যানেল বাংলাদেশে ছিলো না। বলা যায়, বি টি ভি ছিলো সবেধন নীলমণি। সেই বিটিভি দেখার জন্য যে টিভি, তাও ছিলো আলাদিনের চেরাগের মতন এক আকাঙ্ক্ষিত চিজ। আলাদিনের চেরাগের জিন বের হওয়ার
১. বহুজন নানাভাবে সমালোচনা শুরু করলেন সত্যজিতকে নিয়ে। কোনো বিচার-বিবেচনা ছাড়াই তারা বললেন, দুর্ভিক্ষ নিয়ে নির্মিত অশনি সংকেত-এ তিনি রঙের ব্যবহার করে ভুল করেছেন। এমন একটা চলচ্চিত্রে রঙের ব্যবহার করা মোটেই ঠিক হয়নি (?) তার মতো বিজ্ঞ পরিচালকের! রীতিমতো বিতর্ক
ক্যাসিনো রয়্যাল এবং বন্ড-এর নারীবাদ
বাস্তব জীবনে মানবিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে সব থেকে প্রাচীন ও জটিল হলো নারী-পুরুষের সম্পর্ক। প্রথম দিকে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন না করলেও পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক পর্যায়ে এর ভূমিকা ক্রমাগত
ভূমিকার পরিবর্তে জাফর পানাহির ছয় বছরের কারাদণ্ড; ২০ বছরের জন্য চিত্রনাট্য লেখা, চলচ্চিত্র-নির্মাণ, সাক্ষাৎকার দেওয়া ও দেশত্যাগ নিষিদ্ধ—খবরটি পুরনো। তিনি গৃহবন্দি, যদিও ‘দেশের ভিতর তাকে স্বল্পমাত্রায় চলাফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে’১। নতুন খবর হলো এতো
‘আকাশেতে লক্ষ তারা, ধুম : থ্রি একটারে’
ভূমিকা জন্মলগ্ন থেকেই চলচ্চিত্রকে দুইটি স্বার্থ নিয়ে চলতে হয়েছে। প্রথমটি, শিল্পীদের—যারা এই নতুন প্রচার-মাধ্যমটিকে আবিষ্কার করেছিলো এক অভিনব শিল্পকলা হিসেবে। দ্বিতীয়টি, ব্যবসায়িক স্বার্থ—যাদের কাছে এই মাধ্যমটি ছিলো নিছক ব্যবসায়িক পণ্য। তবে এই দুইয়ের
স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশে সানডান্স উৎসব
শীতের বুড়ি যেখানে দুহাত ভরে হিম বয়ে আনে, চারপাশ ঢেকে দেয় সাদা বরফের চাদরে; সে বরফের উপরেই ঠিকরে পড়ে উষ্ণতার অপ্সরী আবেদনময়ী সোনালি রোদ। এ যেনো পৃথিবীর বুকে এক ছোটো স্বর্গরাজ্য। তাই প্রতিবছরই এমন আবহাওয়া উপভোগ করতে এখানে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু, প্রকৃতিপ্রেমী অসংখ্য
‘শুধু নারী হওয়ার কারণেই তিনি আমাকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন’
নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার পরিচয় ছিলো সর্বত্র। অথচ একদিন সেই পথকে পাশ কাটিয়ে চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে এসেছিলেন বর্ণিল এই মাধ্যমে। যদিও সিদ্ধান্তটি নিয়ে এতটুকু ঠকেননি; স্বাধীন চলচ্চিত্রনির্মাতা হিসেবে আজ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত তিনি। ধনী-গরিব, সাদা-কালো, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে
সাইবার বুলিং : নিউমিডিয়ার ‘নিউ টিজিং’
২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, সকাল। রেবেকা অ্যান সেডউইক-এর শোওয়ার ঘরে যত্রতত্র স্তুপ করে রাখা জিনিসপত্র। স্কুলের উদ্দেশে ঘর ছাড়ার আগে সেডউইক তার বইপত্রগুলো একদলা কাপড়ের নীচে লুকিয়ে রাখে; সঙ্গে মুঠোফোনটিও। তার আগে অবশ্য ফোনটির অ্যাপ্লিকেশন কিক মেসেঞ্জারে গিয়ে তার
বিখ্যাত সাহিত্য-কীর্তির চিত্ররূপ দেখার সুযোগ এলে এখনো যেন কুসংস্কার বশেই মূল গ্রন্থটি পড়ে দেখতে ইচ্ছে হয়। আগে পড়া থাকলেও মনে হয় আর একবার নতুন করে পড়ে ছবিটা দেখতে বসলে ভালো করে উপভোগ করা যাবে। সংস্কার বলছি এইজন্যে যে বার বার এরকম করতে গিয়ে ঠকেছি, কখনোই বিশেষ কোন লাভ
গুদামঘর থেকে আন্তর্জাতিকতায় লন্ডন চলচ্চিত্র স্কুল
৫৮ বছর আগে সামান্য একটি গুদাম ঘরে স্বপ্নের যাত্রা শুরু; অল্প দিনেই বিক্রি হয়ে যায় সম্মিলিত সেই স্বপ্ন। তারপর একা পথচলা। নানা চড়াই-উতরাই। তবে আজ ৫৮ বছর পরে এসে স্বপ্নের এতো বড়ো প্রাপ্তি হবে, তা হয়তো ভাবেননি স্বয়ং স্বপ্নদ্রষ্টা গিলমোর রবার্টস। সেই স্বপ্ন আজ
গ্রেটা গার্বো থেকে সুচিত্রা সেন
১৯৬২ সালে মনরো’র মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে দূর প্রাচ্যের এক পাড়াগাঁয়ের ভক্ত কবি দিলওয়ার লিখেছিলেন, You may call her A bad girl A mad girl, A morbid human fright. But I know, O listen to me She is a Sad girl, A red girl Of zodiacal love and light. When the night is dead And sleep is rare, I find her heart sad, I find her in a prayer.1 মনরো’র অন্তর্গত বিষাদ, বেদনার রূপ এভাবেই এঁকেছিলেন কবি
নতুনকে খুঁজে, নতুনের টানে অ্যালাঁ রেনেঁ
মানুষের অবচেতন মনে প্রতিনিয়তই চলতে থাকে স্মৃতি আর বিস্মৃতির দ্বন্দ্ব। সে চাইলেই স্মৃতি থেকে মুক্ত হতে পারে না। কখনো বা সুখস্মৃতির আবেশে সে আত্মতৃপ্তিতে সিক্ত হয়। আবার কখনো দুঃসহ স্মৃতি তাকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। তাই অবচেতন মন, চেতন মনের বাস্তবতাকে কখনো